কেয়ামত ঘটিয়ে হয়েছিলো শুরু! কেয়ামতই তো! ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে সালমান শাহ যে সোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন, তাতে এটাকে ‘কেয়ামত’ বললে বেশি হবে না। প্রথম বলেই যাকে বলে ছক্কা! তার ছবি নিয়ে কথা বললেই চলে আসে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এর মাধ্যমেই রাতারাতি দর্শকদের হৃদয় জয় করেন তিনি। এরপর একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে অল্প সময়ে পরিণত হন স্বপ্নের নায়কে। আজও যিনি রূপালি পর্দার যুবরাজ হয়ে বেঁচে আছেন হৃদয়ে হৃদয়ে।
সালমান মানেই ছিলেন উন্মাদনা। দেশীয় চলচ্চিত্রে ধূমকেতু হয়েই যেন হাজির হয়েছিলেন তিনি। তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মাত্র তিন বছরে তিনি অভিনয় করেন ২৭টি ছবিতে। প্রতিটি ছবি দেখতেই ঢল নেমেছে দর্শকের। ফলে বেশিরভাগই ব্যবসায়িক দিক থেকে হয়েছে সফল। আচার-আচরণ, চলন-বলন ও পোশাক-পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন আধুনিক যুবকের উদাহরণ। তার রুচি, অভিব্যক্তি, বাচনভঙ্গি, বৈচিত্রময় ও আকর্ষণীয় দেহসজ্জা, সামগ্রিক আবেদন- সবই ছিলো যুগোপযোগী।
ব্যক্তিজীবনে সালমান ছিলেন আবেগপ্রবণ মানুষ। তার কথায় থাকতো আহ্লাদ। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন চমৎকার। কোথাও বেড়াতে গেলে সহশিল্পীদের জন্যও জামা, জুতা-সহ নানা উপহার নিয়ে আসতেন। সহশিল্পী কী পোশাক পরছেন, তার সঙ্গে মিলিয়ে নিজের পোশাক বাছাই করতেন। মাঝে মধ্যে কোনো সহশিল্পীর জ্বর শুনলে ফল নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন তার বাসায়।
বেঁচে থাকলে হয়তো প্রতি বছর ৬ সেপ্টেম্বরের প্রাক্কালে নিজেকে নিয়ে নানারকম স্মৃতিময় প্রতিবেদন দেখতেন না সালমান শাহ! দেখতে হতো না। ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মদিনে হয়তো দেখতেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে দপ করে নিভে গেলো তার জীবনপ্রদীপ। এই আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেয়ে গোটা দেশই হয়ে পড়েছিলো স্তম্ভিত। সেই বিষাদ কাটেনি গত ১৯ বছরেও। তার হাসিমাখা মুখটা সবার মনে গেঁথে থাকবে চিরদিন। শুধু প্রয়াণ দিবস নয়, সারাবছরই তাকে স্মরণ করেন ভক্তরা। তার মৃত্যু দর্শকদের মধ্যে যে শোকের ছায়া বিস্তার করেছে তা বিস্ময়কর। নজিরবিহীন। প্রিয় নায়কের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে দুঃখে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছিলো। এ দেশে কেনো, সব দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসেই এমনটা হওয়ার কথা শোনা গেছে খুব কম।
সালমানের হাঁপানির সমস্যা ছিলো। তবুও খুব ধূমপান করতেন। নিজের ব্যাপারে তিনি ছিলেন আগাগোড়া উদাসীন। তবে বোহেমিয়ান বলা যাবে না। বাউন্ডুলেও না। ভালোই তো চলছিলো সব। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ একদিন গায়েব হয়ে গেলেন সালমান! এমন জায়গায় গেলেন, যেখান থেকে ফেরে না কেউ। টিভি চ্যানেলগুলো এখনও সালমানের ছবিগুলো দেখায়। নতুন প্রজন্মের মধ্যেও তার কাজের প্রতি আগ্রহ লক্ষণীয়। হবেই বা না কেনো, তিনি যে চিরসবুজ!
আমাদের কাছে সালমান এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। তিনি যা দেখিয়েছেন, তাতে তাকে কি ভুলে থাকা যায়? তাই আজও তাকে হারানোর ব্যথায় জর্জরিত চলচ্চিত্র শিল্প। তার প্রস্থানে তৈরি হওয়া শুন্যতা পূরণ হয়নি, হয়তো হবেও না। এজন্যই চাইলেও তাকে ভোলা যাবে না। সালমানকে দর্শকরা খুঁজে যায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পাতায়। হয়তো আকাশে, পাহাড়ে, নদীতে, সাগরে। তিনি থাকেন সবার আনন্দ অশ্রুতে, অন্তরে অন্তরে। ভালো থাকুন সালমান শাহ। আপনাকে অগ্রদৃষ্টি পরিবারের শ্রদ্ধা।
সালমান শাহ অভিনীত ছবি
কেয়ামত থেকে কেয়ামত (২৫ মার্চ, ১৯৯৩)
তুমি আমার (২২ মে, ১৯৯৪)
অন্তরে অন্তরে (১০ জুন, ১৯৯৪)
সুজন সখী (১২ আগস্ট, ১৯৯৪)
বিক্ষোভ (৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪)
স্নেহ (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪)
প্রেমযুদ্ধ (২৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৪)
কন্যাদান (৩ মার্চ, ১৯৯৫)
দেনমোহর (৩ মার্চ, ১৯৯৫)
স্বপ্নের ঠিকানা (১১ মে, ১৯৯৫)
আঞ্জুমান (১৮ আগস্ট, ১৯৯৫)
মহামিলন (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫)
আশা ভালোবাসা (১ ডিসেম্বর, ১৯৯৫)
বিচার হবে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬)
এই ঘর এই সংসার (৫ এপ্রিল, ১৯৯৬)
প্রিয়জন (১৪ জুন, ১৯৯৬)
তোমাকে চাই (২১ জুন, ১৯৯৬)
স্বপ্নের পৃথিবী (১২ জুলাই, ১৯৯৬)
সত্যের মৃত্যু নাই (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬)
জীবন সংসার (১৮ অক্টোবর, ১৯৯৬)
মায়ের অধিকার (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৬)
চাওয়া থেকে পাওয়া (২০ ডিসেম্বর, ১৯৯৬)
প্রেম পিয়াসী (১৮ এপ্রিল, ১৯৯৭)
স্বপ্নের নায়ক (৪ জুলাই, ১৯৯৭)
শুধু তুমি (১৮ জুলাই, ১৯৯৭)
আনন্দ অশ্রু (১ আগস্ট, ১৯৯৭)
বুকের ভেতর আগুন (৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭)
একনজরে
প্রকৃত নাম: শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন
পর্দা নাম: সালমান শাহ
জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০
বাবা: কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা: নীলা চৌধুরী
সহধর্মিণী: সামিরা
প্রথম চলচ্চিত্র: কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি: বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা: মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা: শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি: ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র: মিল্ক ভিটা, জাগুয়ার, কেডস, গোল্ডস্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা
ধারাবাহিক নাটক: পাথর সময়, ইতিকথা
একক নাটক: আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী
মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬